খাগড়াছড়িতে গণধর্ষণের ঘটনায় সচেতন আদিবাসী ছাত্র সমাজের প্রতিবাদ

খাগড়াছড়ি সদরস্থ বলপিয়ে আদামে সেটেলার বাঙ্গালি কর্তৃক আদিবাসী নারী গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি সচেতন আদিবাসী ছাত্র সমাজের।_______________________________________
Indigenous culture and lifestyle
২৬ সেপ্টেম্বর২০২০
     

খাগড়াছড়ির বলপিয়ে আদাম এলাকায় আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে গতকাল ২৪/০৯/২০২০ বৃহস্পতিবার রাত ২.২৬ মিনেটে মধ্যযুগীয় কায়দায় গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০০৫ সালে ভাইকে এবং ২০০৬ সালে বাবাকে হারানোর পর থেকেই অসহায় এই নারী মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ ছিলেন বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা।মেয়েটির মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় বার বার তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন, আর বলছিলেন, ‘কী অপরাধ ছিল আমার অসহায় মানসিক বিপর্যস্ত মেয়েটির? চোখের সামনে মানুষ নামের নরপশুরা আমার অসহায় মেয়েটিকে হাত-পা বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করেছে। মেয়েকে পশুদের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে আমাদেরকেও তারা নির্মমভাবে পিটিয়েছে।’কান্না করতে করতে এই মা বলছিলেন, ‘এই দেশ কি আমাদের না? আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? আমার মেয়ের ওপর যারা পাশবিক অত্যাচার করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’মেয়েটির আত্মীয়রা জানান, ধর্ষকরা ওই এলাকার সেটেলার বাঙালি। তারা নয় জন মিলে অসহায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের পর তার বাড়িতেও লুটপাট চালায়। পাহাড়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের মত তিনিও একজন, তিনি জানেন- এই রাষ্ট্র তার সম্ভ্রমহানির বিচার করতে পারবে না। খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম আফসার জানান, যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে, তার ৩০০ থেকে ৪০০ গজের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুইটি চেকপোস্ট রয়েছে ।যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান থাকা সত্ত্বেও এ ধরণের ঘটনা ঘটা খুবই দুঃখজনক।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিগত কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে যেভাবে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তার অংশ হিসেবে পরশু দিবাগত রাতে খাগড়াছড়িতে আবার গণধর্ষণের ঘটনা ঘটল। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া এই ধরনের সিরিজ অপরাধ ঘটানো সম্ভব নয়।
শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ সচেতন জুম্ম ছাত্র সমাজের, খোদ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ধর্ষণের পর অপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠে। তাই অপরাধীদের না ধরে, যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরকে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের ঘটনার পর অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি ফলে নারী নিপীড়ন পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে অভিহিত করে সচেতন জুম্ম ছাত্র সমাজ বৃন্দরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত যত ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে তাতে কোনো ঘটনার বিচার হয়নি। এই বিচার না হওয়ার কারণে অপরাধীরা বারবার একই অপরাধ সংঘটিত করার সাহস পাচ্ছে । এর নেতিবাচক প্রভাব সমতলেও সমানভাবে পড়ছে।

’গত এক মাসের মধ্যে বান্দরবানের লামায় এক ত্রিপুরা নারীকে গণধর্ষণ, খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে মারমা সম্প্রদায়ের এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ এবং খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় নাজমুল হাসান নামে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ের ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে। অভিযুক্ত একজন ধর্ষককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহালছড়ির ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।২০১৮ সালের ২৮ জুলাই খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার নয়মাইল এলাকায় ১০ বছরের শিশু কৃত্তিকা ত্রিপুরা পূর্ণাকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। মেয়ের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ নিয়ে পূর্ণার মায়ের আহাজারি সেদিন রাষ্ট্রের কানে পৌঁছায়নি।পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারাবাহিক নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো জাতিগত নিপীড়নের অংশ বলে মনে করেন স্থানীয়দের অনেকেই। পাহাড়ে এ পর্যন্ত ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যার মত জঘন্য যত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটিরই সঠিক বিচার হয়নি, যা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ। বিচার  না হওয়ায় পাহাড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে।পাহাড়িদের  অনেকেই মনে করেন, শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই  পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলছে।চুক্তির এত  বছর পরেও সরকার তার প্রতিজ্ঞা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায়, এ অঞ্চলের জুম্ম  মায়েরা বার বার আর্তনাদ করেও তাদের সন্তানের সম্ভ্রমহানি ও হত্যার বিচার  পাচ্ছেন না।তেমনি একজন অসহায় জুম্ম মায়ের মত আমাদেরও নিরুপায় হয়ে বলতে হয়, এই রাষ্ট্র কার? এই দেশ কি আমাদের সবার জন্য সমান নিরাপদ?

পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন আদিবাসী ছাত্র সমাজের।
প্রচারেঃ সচেতন আদিবাসী ছাত্র সমাজ।  

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র